পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধের ব্যাখ্যা এবং প্রস্তুতি
পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধের ব্যাখ্যা এবং প্রস্তুতি
আমাদের আজকের আলোচনা সভায় উপস্থিত আছেন গ্রীস হইতে আগত ভাই আবদুল কাদের যিনি অর্থোডক্স খ্রীষ্টধর্ম হইতে ইসলাম গ্রহন করিয়াছেন । যিনি গতরাতে এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছেন এবং তিনি গ্রীসে এই বছর আমার জন্য একটি সেমিনারের আয়োজনের চেষ্টা করিতেছেন । ভাই আবদুল কাদের আপনি একটু দাঁড়ান যাতে আমরা সবাই আপনাকে দেখিতে পাই । আমাদের মধ্যে আরেক ভাই আছেন যিনি পাকিস্তান থেকে আসিয়াছেন, ভাই রায়না । আমরা তাদেরকে এবং আপনাদের সকলকে আজকে আলোচনা সভায় স্বাগত জানাই । তো আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হইল আসন্ন পারমাণবিক যুদ্ধ । আমাদের উদ্দেশ্য আপনাদেরকে ভয় দেখানো নয়, সন্ত্রস্ত করা নয় । কিন্তু ইসলামী চিন্তাবিদদের কিছু দ্বায়িত্ব রহিয়াছে । আমরা যদি না জানাই ভবিষ্যতে কি ঘটিতে যাইতেছে, কোরআনে এই ব্যাপারে কি বলা আছে এবং নবী করীম (সাঃ) কি বলিয়াছেন, তবে মানুষ কবরে বসিয়া আমাদেরকে অভিশাপ দিবে, আপনারা কেন আমাদেরকে বলেন নাই ? সুতরাং এজন্য আমাদেরকে বিষয়টি প্রচার করতে হয় এবং আশা করি আপনারা এই আলোচনাতে আমার সাথে ধৈর্যধারন করিয়া অবস্থান করবেন । পারমাণবিক যুদ্ধ আসিতেছে, এটা আমাদের আখেরী জামানা বিদ্যায় আছে (কলিকাল বিদ্যা) । মহানবী (সাঃ) ইহাকে অভিহিত করিয়াছেন মালহামা (মহাযুদ্ধ) হিসাবে । অধিকাংশ মুসলমানদেরই এই শব্দের সাথে পরিচয় নাই । খ্রিষ্টানদের আখেরী জামানা বিদ্যাতে এই মহাযুদ্ধের কথা আছে, তারা একে বলে আরমাগেডান । ইহা অবশ্যই পারমাণবিক যুদ্ধ হইতে বাধ্য, কিছুতেই গতানুগতিক যুদ্ধ হতে পারে না । কেন ? আজকের আলোচনায় আমরা ইহার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করিব, অবশ্যই ইসলামের দৃষ্টিতে । আগামীকালের আলোচনায় আমরা ইহার অর্থনৈতিক এবং মুদ্রাব্যবস্থার প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করিব । বোখারী শরীফের একটি হাদীস আছে, যার বিশুদ্ধতা নিয়ে কেহ প্রশ্ন তোলেন নাই । “ফোরাত নদী তাহার সোনার পাহাড় বাহির করিয়া দিবে এবং লোকেরা তাহার জন্য যুদ্ধ করিবে । তাতে শতকরা ৯৯ জন নিহত হইবে । প্রত্যেকেই আশা করিবে যে, সে হয়ত বাঁচিয়া যাইবে (এবং সোনার পাহাড়ের মালিক হইবে) এবং মুসলমানরা অবশ্যই সেই সোনা স্পর্শ করিবে না”। আমি বলতে চাই যে, এই হাদীসটি আমি বিশ বছর পূর্বে পড়িয়াছি কিন্তু তাহার মানে বুঝি নাই যতক্ষন না আল্লাহ তায়ালা দয়া করিয়া আমাকে ইহার অর্থ বুঝিবার সুযোগ দিয়াছেন । পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোন যুদ্ধ হয় নাই যাতে শতকরা ৯৯ জন নিহত হইয়াছে । ইহা হইবে পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ব্যতিক্রমধর্মী যুদ্ধ যাহার সাথে অন্য কোন যুদ্ধের কোন তুলনাই হইতে পারে না । একমাত্র তখনই আপনি শতকরা ৯৯ জনকে হত্যা করিতে পারবেন যখন আপনি ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যবহার করিবেন । আর এই যুগে ব্যাপক গণবিধ্বংসী অস্ত্র মানে এটম বোমা / পারমাণবিক বোমা । কাজেই এই যুদ্ধ হইবে পারমাণবিক যুদ্ধ । কাজেই মহানবী (সাঃ) পরমাণু যুদ্ধের ভবিষ্যতবাণী করিয়াছেন এবং তিনি ভবিষ্যতবাণী করিয়াছেন পারমাণবিক যুদ্ধ সংঘঠিত হবে সোনার পাহাড়ের দখল নিয়া । আর আপনি যদি সোনার পাহাড় সম্পর্কে জানিতে চান তবে আগামীকালের লেকচারে আবার আসিবেন । কাজেই আমাদের আখেরীজামানা বিদ্যায় পারমাণবিক যুদ্ধের কথা আছে, যেমনটা খ্রীষ্টানদের আছে এবং ইহুদীদের আছে । আখেরী জামানা সম্পর্কে মুসলমানদের আছে সবচাইতে ব্যাপক, নিখুঁত এবং গভীর জ্ঞান । ইহুদী এবং খ্রীষ্টানদের আখেরী যুগ সম্পর্কিত জ্ঞান যথেষ্ট আছে কিন্তু তা কখনও আমাদের সমতুল্য নয় । কিন্তু রহস্যজনক বিষয় হলো এই বিষয়ে আমাদের জ্ঞান সর্বাধিক হওয়া সত্ত্বেও এই বিদ্যাকে আমরা ব্যবহার করি না এবং আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্টানগুলোতে এগুলো পড়ানো হয় না । ফলে আমাদের মধ্যে আখেরি জমানা বিদ্যায় সুদক্ষ আলেম খুঁজিয়া পাওয়া যায় না । কাজেই এই বিষয়ের গবেষনায় আমরা ইহুদী-খ্রীষ্টানদের তুলনায় অনেক পিছাইয়া পড়িয়াছি । রাসুলে পাক (সাঃ) একদা হাঁটিবার সময় দেখিলেন তাঁহার কতিপয় সাহাবী বসিয়া আলোচনা করিতেছে । তিনি জিজ্ঞাসা করিয়া জানিতে পারিলেন যে, তাহারা কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে আলোচনা করিতেছিল । তখন তিনি বলিলেন, আপনারা সকলেই এই হাদিসটি জানেন, কেয়ামতের প্রধান লক্ষণ দশটি । আমি জানি ত্রিনিদাদের সকল মুসলিমই এই দশটি লক্ষণের কথা অবগত আছেন । তিনি বলিলেন, কেয়ামত অনুষ্টিত হইবে না যতক্ষন না দশটি লক্ষণ প্রকাশিত হইবে । এগুলোকে বলা হয় মহাপ্রলয়ের প্রধান দশ লক্ষণ । তবে এগুলো সময়ের ধারাক্রম অনুযায়ী বর্ণনা করা হয় নাই । (এক) আল মাসীহ আদ দাজ্জাল, ভন্ড মাসিহ যে সত্যিকারের মাসীহ ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ) অভিনয় করিবেন । (দুই) ইয়াজুজ এবং মাজুজ, (তিন) ঈসা (আঃ)-এর আকাশ হইতে অবতরণ, (চার) দোখান অর্থাৎ ধোয়া । পবিত্র কোরআন বলিতেছে, একদিন আসমান ধোয়ায় ভরিয়া যাইবে । আমরা যখন কোন মতামত দেই ধোয়া কোথা থেকে আসিবে এবং কবে আসিবে, আপনারা তা গ্রহন করবেন না যতক্ষন না আপনাদের বিশ্বাস জন্মে যে ইহা সঠিক । আমার মতে, (এবং আল্লাহই ভালো জানেন) এই ধোয়া হবে এটম বোমার বিস্ফোরণে সৃষ্ট ব্যাঙের ছাতার মতো ধোয়া । আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলিয়াছেন, এমন একটি সময় আসবে যখন অনেক দিন পর্যন্ত সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাইবে না । খ্রীষ্টান এবং ইহুদীদের শেষযুগ বিদ্যাতেও একই কথা আছে । কাজেই অনেকদিন পর্যন্ত সূর্যের আলো থাকবে না । কেননা এটম বোমার ধোয়ায় আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে । (পাঁচ) দাব্বাতুল আরদ বা মাটির জন্তু , (ছয়) পশ্চিম দিক হইতে সূর্য উঠিবে, (সাত) পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে একটি ভূমিকম্প / ভূমিধ্বস (সিংকহোল), এটি গতানুগতিক ভূমিকম্প হইবে না বরং এটি হবে এমন ভূমিকম্প যাহা ভূখন্ড খাইয়া ফেলিবে, (আট) পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্তে আরেকটি ভূমিকম্প / ভূমিধ্বস, (নয়) আরব উপদ্বীপে একটি ভূমিকম্প / ভূমিধ্বস, (দশ) ইয়েমেন থেকে একটি আগুন বাহির হইবে যাহা মানুষকে বিচারের জায়গায় নিয়ে হাজির করবে, এটি বর্তমানে সবচেয়ে বেশী আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হইয়াছে (অর্থাৎ ইয়েমেনে সৌদী হামলা) । এই দশটি আলামতের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান আলামত হলো “আকাশ থেকে ঈসা (আঃ)-এর নামিয়া আসা” । ইহা সূর্যের মতো কেন্দ্রে অবস্থান করিতেছে এবং অন্য সকল আলামত ইহার চারদিকে তারকাদের ন্যায় ঘুরিতেছে । জুলাই মাসের ২০ তারিখে আমি মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে একটি লেকচার দেই এবং রাশিয়ানরা বিস্মিয়ে বিমূঢ় হয়ে গেলো যখন তারা ইসলামী আখেরী জামানা বিদ্যায় ঈসা (আঃ) ফিরে আসার গুরুত্বের কথা জানিতে পারিল । কেননা ইরান তাদেরকে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় বুঝাইতে সক্ষম হইয়াছে যে, ইমাম মাহদী (আঃ)-এর আবির্ভাব হইল শেষ যুগের প্রধান আলামত (তাদের শিয়া মতবাদ অনুযায়ী) । কাজেই তাহাদেরকে দেখিলাম ইমাম মাহদী, ইমাম মাহদী জিকির করিতেছে । কিন্তু আমি তাহাদের সামনে কোরআন উপস্থাপন করিয়া দেখালাম যে, ইহা ভূল । মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যাহা করিতে চায় তাহা করিতে পারিবে না । মানব ইতিহাসের সবচাইতে বলিষ্ট কন্ঠস্বরকে সে নিস্তব্ধ করিতে পারিবে না । পৃথিবীর সবচাইতে বলিষ্ট কন্ঠস্বর হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ভবিষ্যতবাণী করিয়াছেন ঈসা (আঃ)-এর ফিরিয়া আসা সম্পর্কে । ইসলামে আখেরী জামানার প্রধান লক্ষণ হলো ঈসা (আঃ)-এর ফিরিয়া আসা । আপনি যদি ইহা অস্বীকার করেন তবে আমার লেকচার শোনা আপনার জন্য সময় অপচয় ছাড়া আর কিছু নয় । হ্যাঁ, আপনি আমার লেকচার শুনে অযথা সময় নষ্ট করছেন । ইসলামে আখেরী জামানার প্রধান আলামত বা মূল ভিত্তিপ্রস্তর হইল ঈসা (আঃ)-এর আকাশ হইতে অবতরণ । পবিত্র কোরআনে দুই ধরনের আয়াত / বাণী / বাক্য রহিয়াছে । সুরা আল ইমরানের প্রথম দিকের আয়াতগুলো পড়েন । সেখানে বলা হইয়াছে পবিত্র কোরআনে আয়াতের দুটি সমুদ্র রহিয়াছে । প্রথমটি হইল আয়াত মোহকামাত, যেই আয়াতগুলোর অর্থ সহজ এবং সরল । এই আয়াতগুলোকে তাফসির অর্থাৎ ব্যাখ্যা করিলেই চলে । কোরআন বলিতেছে এই আয়াতগুলো হইল উম্মুল কিতাব বা কোরআনের প্রাণস্বরূপ । আবার কোরআনে আয়াতের দ্বিতীয় আরেকটি সমুদ্র আছে যাহাকে বলা হয় আয়াতে মোতাশাবিহাত । এগুলো এমন আয়াত যাকে তা’বীর করিতে হয় অর্থাৎ মর্ম উদঘাটন করিতে হয় । একটি উদাহরণ দেই । পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, (রমযান মাসের রাতে) কালো সুতা থেকে সাদা সুতা পৃথক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পানাহার (সাহরি) করিতে থাকো । একজন সাহাবী সাহ্রীর সময় একটি সাদা সুতা এবং একটি কালো সুতা নিয়ে বসিলেন এবং কখন খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করিবেন কিছুই স্থির করিতে পারিলেন না । কারণ সাদা সুতা আর কালো সুতা কথাটির প্রকৃত অর্থ তিনি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করিতে পারেন নাই । ফলে তিনি রাসুলে পাক (সাঃ)-এর নিকট আসিলেন । আল্লাহর নবী (সাঃ) বলিলেন, না-না ! সাদা সুতা আর কালো সুতা মানে সত্যিকার অর্থে সাদা সুতা আর কালো সুতা নয় । এখানে কালো সুতা আর সাদা সুতা বলিতে আল্লাহ বুঝিয়েছেন রাতের অন্ধকার এবং দিনের উজ্জ্বলতা । তো ইহাকেই বলে তা’বীর বা মর্মোদ্ঘাটন । মাসীহ দাজ্জাল বা ভন্ড মিথ্যাবাদী মাসীহকে যেহেতু সত্যিকারের মাসীহ ঈশা ইবনে মারিয়াম (আঃ)-এর চরিত্রে অভিনয় করিতে হইবে, যাহাতে ইহুদীরা তাহাকে সত্যিকার মাসীহ বলিয়া বিশ্বাস করে । এজন্য তাহাকে সারা বিশ্ব শাসন করিতে হইবে যাহার রাজধানী হইবে জেরুজালেম । দাজ্জাল যদি সফলতার সাথে সত্যিকার মাসীহের চরিত্রে অভিনয় করিতে চায়, তবে তাহাকে সমগ্র বিশ্বের একচ্ছত্র শাসক হইতে হইবে । কেননা সত্যিকার মাসিহ ঈশা (আঃ) যখন ফিরিয়া আসিবেন তিনি তাহাই করিবেন, জেরুজালেম হইতে সারা দুনিয়া শাসন করিবেন । মহানবী (সাঃ) বলিয়াছেন, ঈসা মাসিহ (আঃ) যখন আসমান হইতে অবতরন করিবেন তিনি হইবেন শাসক এবং ন্যায়বিচারক । পবিত্র কোরআনে কি দাজ্জালের কথা আছে ? অনেকেই দাজ্জালের বিষয়টি অস্বীকার করেন । বলেন, এটি বোগাস, কোরআনের কোথাও দাজ্জালের কথা উল্লেখ নাই । কিন্তু ইহারা প্রাইমারী লেভেলের পন্ডিত । আপনি বেশীর পক্ষে ইহা বলিতে পারেন যে, কোরআনের মো’হকামাত আয়াতে নাই । অবশ্যই কোরআনের মো’তাশাবিহাত আয়াতে দাজ্জালের কথা পাওয়া যাইবে । পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াত রহিয়াছে যাহা সরাসরি দাজ্জালের সাথে সম্পৃক্ত বিশেষ করিয়া সুরা কাহফ । কাজেই দাজ্জাল সম্পর্কিত সকল আয়াতকে তাফসীর করিলে চলিবে না বরং তা’বীর করিতে হইবে যেমন হাদীসে উল্লেখিত “সোনার পাহাড়” । আমাদের আগামী কালের লেকচারে বিষয়টি আলোচনা করিব ইনশাআল্লাহ । হুযুরে পাক (সাঃ) দাজ্জাল সম্পর্কে বলিয়াছেন, যখন দাজ্জালকে মুক্তি দেওয়া হইবে । আপনারা আমার “পবিত্র কোরআনে জেরুজালেম” বইটি পড়িলে হাদীসটি দেখিতে পাইবেন, যেই বইটি আমি চৌদ্দ বছর আগে লিখিয়াছিলাম এবং তের বছর পূর্বে ছাপা হইয়াছে । হাদীসটিতে বলা হইয়াছে, দাজ্জাল একটি দ্বীপে বন্দি আছে, তাহার হাত দুইটি ঘাড়ের সাথে শিকলে বাধা আছে, পা দুটিও শিকলে আটকানো । এখন তাহা বিস্তারিত আলোচনার সময় নাই । সাইয়েদুল মোরসালীন (সাঃ) বলিয়াছেন, তাহাকে যখন মুক্তি দেওয়া হইবে তখন সে চল্লিশ দিন দুনিয়াতে অবস্থান করিবে । সাবধান ! নবী করিম (সাঃ) যখন চল্লিশ দিন বলেন, তাহাকে আক্ষরিক অর্থে চল্লিশ দিন মনে করিবেন না । কেননা জনৈক সাহাবী রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন যে, পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কোনটি ? তিনি উত্তর দিলেন, মসজিদুল হারাম । সাহাবী আবার জিজ্ঞাসা করিলেন, ইহার পর কোন মসজিদটি নির্মিত হয় ? তিনি বলিলেন, মসজিদুল আক্কসাহ । সাহাবী জিজ্ঞাসা করিলেন, দুইটি মসজিদ তৈরীতে ব্যবধান কত বছর ? নবী করীম (সাঃ) বলিলেন, চল্লিশ বছর । অথচ প্রতিটি আরববাসী জানে যে, এই দুইটি মসজিদের নির্মাণের ব্যবধান কয়েক হাজার বছর । কাজেই রাসুলে পাক (সাঃ)-এর কথিত চল্লিশ বছরকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহন করিবেন না । ইহা মোতা’সাবিহাত অর্থাৎ রূপকার্থে ব্যবহৃত । রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেন যে, দাজ্জালকে যখন সেই দ্বীপ থেকে মুক্তি দেওয়া হইবে, সে পৃথিবীতে চল্লিশ দিন অবস্থান করিবে । তার একদিন হইবে এক বছরের মতো, একদিন হইবে এক মাসের ন্যায়, একদিন হইবে এক সপ্তাহের মতো এবং তার অবশিষ্ট দিনগুলি হইবে তোমাদের দিনের মতো । আমার “পবিত্র কোরআনে জেরুজালেম” বইটি এই হাদীসের উপর ভিত্তি করিয়া রচিত । ইহাতে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছি যে, দাজ্জালের জীবনের শেষের দিনগুলি যখন আমাদের দিনের মতো হইবে, তখনই আমরা তাহাকে দেখিতে পাইব । দাজ্জাল এখনও পৃথিবীতে আছে কিন্তু আমরা তাহাকে দেখিতে পাই না । এই কক্ষে কি ফেরেশতা আছে ? উত্তর দেন, হ্যাঁ । আমাদের প্রত্যেকের সাথেই দুইজন করে ফেরেশতা আছেন । আমরা কি তাহাদের দেখিতে পাই ? নাহ । এই রুমে কি জ্বীন আছে ? হ্যাঁ । আমরা কি তাহাদের দেখিতে পাই ? না । একই ব্যাপার দাজ্জালের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য । দাজ্জালের একদিন যখন আমাদের এক বছরের সমান তখন সে আমাদের সাথেই আছে তবু আমরা তাহাকে দেখিতে পাইব না । দাজ্জালের একদিন যখন আমাদের এক মাসের সমান হইবে তখনও আমরা তাহাকে দেখিতে পাইব না । দাজ্জালের একদিন যখন আমাদের এক সপ্তাহের সমান হইবে, তখনও আমরা তাহাকে দেখিতে পাইব না । কেবলমাত্র দাজ্জালের জীবনের শেষের দিনগুলি যখন আমাদের দিনের সমান হইবে, তখনই কেবল আমরা তাহাকে দেখিতে সক্ষম হইব । মহানবী (সাঃ) বলিয়াছেন, সে (দাজ্জাল) হইবে একজন ইহুদী, শক্তসামর্থ যুবক, তাহার থাকিবে কোচঁকানো চুল (অর্থোডক্স ইহুদীরা যেমন চুল রাখে) । তারপর সে জেরুজালেম থেকে ঘোষণা করিবে, আমিই (সেই প্রতিস্রুত) আল মাসীহ (ম্যাসাইয়া) । তাহারা (ইহুদীরা) তাহাকে মাসিহ হিসাবে বিশ্বাস করিয়া নিবে । কিন্তু তাহার পূর্বে দাজ্জাল দুনিয়াতেই আছে কিন্তু আমরা তাহাকে দেখিতে পাইব না । ইহাতে আমি উপসংহারে পৌঁছিয়াছি যে, দাজ্জালকে প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশ করিবার পূর্বে তিনটি ধাপ অতিক্রম করিতে হইবে । সে তার জীবনের প্রথম পর্যায়ে যাহা করিয়াছে তাহা হইল একটি পরাশক্তি / সুপারপাওয়ার রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করা যার নাম ব্রিটেন । আমার মনে আছে, আমি যখন স্কুলে পড়িতাম প্রতিদিন সকালে ক্লাশ শুরু হওয়ার পূর্বে আমাদেরকে গান গাহিতে হইত “গড সেভ দ্যা কিং” । চিন্তা করেন ইমরান হোসেন গাহিতেছে “গড সেভ দ্যা কিং” হা-হা-হা- । তখন আমার বয়স ছিল নয় । তারপর আমার বয়স যখন দশ হইল তখন রাজা পঞ্চম জর্জের মৃত্যুর পরে ক্ষমতায় আসিলেন রানী । তখন সবাই গাহিতাম “গড সেভ দ্যা কুয়িন” । তখন ব্রিটেন পরিণত হইল পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণকারী শক্তিতে , যাহার সমতুল্য কোন শক্তিশালী রাষ্ট্র পৃথিবীতে দেখা যায় নাই । সেই যুগটাকে বলা হয় প্যাক্স ব্রিটানিকা, আপনার হয়ত শব্দটির সাথে পরিচিত আছেন । পরাশক্তি হইল এমন এক রাষ্ট্র যাহার ক্ষমতায় বাধা সৃষ্টি করিতে পারে এমন কোন প্রতিদ্বন্দি রাষ্ট্র পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নাই । ব্রিটেন কেবল সামরিক শক্তিতেই অপ্রতিদ্বন্দ্বি ছিল না, অর্থনীতিও ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে । আমরা যখন স্কুলে অধ্যয়ন করিতাম তখন হিসাব শিখিতাম এক পাউন্ড সমান এতো এতো । কারণ তখন ব্রিটেনের মুদ্রা পাউন্ড স্টারলিং ছিল মুদ্রার জগতে শাহান শাহ, পৃথিবীর সেরা মুদ্রা । তারপর আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম যে, দাজ্জাল যখন তাহার দ্বিতীয় ধাপে চলিয়া যাইতেছে অর্থাৎ “দাজ্জালের এক দিন হইবে এক মাসের মতো” তখন ব্রিটেনকে হটাইয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হইল পৃথিবীর একচ্ছত্র সুপারপাওয়ার । মার্কিন যুক্তরাষ্ট কেবল সামরিক শক্তির জোরে পরাশক্তি হয় নাই বরং একইসাথে বিশ্ব অর্থনীতির উপরও ছিল তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রন । একইভাবে ব্রিটেনের পাউন্ড স্টার্লিংয়ের পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার হইল আন্তর্জাতিক মুদ্রা, রিজার্ভ কারেন্সী । আন্তর্জাতিক অর্থনীতির উপরে আগামী কালের লেকচারটি হইবে আপনাদের জন্য একটি অপার বিস্ময় । বর্তমানে দাজ্জালের “একদিন হইবে এক মাসের সমান” শেষ হওয়ার পথে এবং “একদিন হইবে এক সপ্তাহের সমান” শুরু হওয়ার পথে । কাজেই বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অন্য একটি পরাশক্তির জন্য তার জায়গা ছাড়িয়া দিতে হইবে । যেইভাবে প্যাক্স ব্রিটানিকার পড়ে আসিয়াছিল প্যাক্স এমেরিকানা । প্যাক্স এমেরিকানার পরে আসিবে প্যাক্স জুডাইকা, ফলে ইসরাঈল হইবে পরবর্তী সুপারপাওয়ার । এখন প্রশ্ন আসিতে পারে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল একটি বিরাট দেশ, বিগত একশ বছরে পৃথিবীর লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে অনেক এবং পৃথিবীর আকৃতিও বৃদ্ধিও পাইয়াছে বিপুল, ক্ষুদ্র ইসরাইলের পক্ষে কিভাবে এত বড় বিশাল পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ? পৃথিবীকে শাসন করিবার জন্য হয় ইজরাঈলকে তার আকৃতি বৃদ্ধি করিয়া বিরাট দেশে পরিণত হইতে হইবে যাহা সম্ভব নয়, কেননা ইসরাঈলের অবস্থান ইসলামী সমুদ্রের মাঝখানে, চারদিকে মুসলিম রাষ্ট্র । আরেকটি হইল পৃথিবীকে ছোট করিয়া আনিতে হইবে । এই ব্যাপারে কোরআনের কি বলিবার আছে ? শুনুন আল্লাহ পবিত্র কোরআনের সুরা ইসরায় বলিতেছেন, “এমন কোন শহর নগর নাই, যাহাকে আমরা (অবাধ্যতার কারণে) কেয়ামত দিবসের পূর্বে ধ্বংস করিব না অথবা যাহাকে কঠোর শাস্তি দিব না। ইহা তো কিতাবে লিপিবদ্ধ হইয়া গিয়াছে (আল কোরআন-১৭:৫৮)” । পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি আমাদেরকে সতর্ক করিতেছে সেই মহাধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে যাহা সামনে আসিতেছে । এই মালহামা অর্থাৎ ভয়ঙ্কর যুদ্ধ সম্পর্কে কোরআনে আরো আয়াত আছে, যেগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করিবার মতো এখন সময় নাই । মালহামা সম্পর্কে যত হাদীস আছে তাহার মধ্যে একটিতে বলা হইয়াছে “(সেই যুদ্ধে) প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ৯৯ জনই নিহত হইবে”। বর্তমানে “দাজ্জালের এক দিন হইবে এক মাসের ন্যায়” শেষ হওয়ার পথে এবং “দাজ্জালের এক দিন হইবে এক সপ্তাহের মতো” শুরু হওয়ার পথে । আমরা যদি পেছন ফিরিয়া দেখি তবে দেখিতে পাইব যখন প্যাক্স ব্রিটানিকার বদলে প্যাক্স এমেরিকানা আসিতেছিল, তখন বিশাল যুদ্ধ বাধিয়াছিল । তাহারা ইহাকে বলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ । এইসব নাম পশ্চিমারা দিয়াছে, আমি মনে করি এগুলো বিশ্বযুদ্ধ নয় বরং ইউরোপীয়ান যুদ্ধ । এইসব যুদ্ধে এমন ধ্বংসকাণ্ড সংঘঠিত হইয়াছে তাহা মানবজাতি ইতিপূর্বে কখনও দেখে নাই । …..দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলিবার সময় আমি জন্ম হইয়াছিল, দেখিয়াছি লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মানুষ তাহাতে হত্যা করা হইয়াছে । কাজেই আমেরিকার পরিবর্তে ইসরাঈল যখন পরাশক্তি হইবে, তখনও নতুন ধরনের অর্থব্যবস্থা আসিবে, পেট্টোডলারের দাপট থাকিবে না আর সাথে সাথে আসিবে বিরাট বিশাল ভয়ঙ্কর যুদ্ধ (তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ), এই মামুলি বিষয়টি বুঝিবার জন্য আপনার পিএইচডি ডিগ্রীধারী হওয়ার দরকার নাই । কিন্তু কোন শক্তির বিরুদ্ধে এই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ / মালহামা সংঘটিত হইবে ? পৃথিবীতে দুইটি শক্তি আছে যাহারা ইসরাঈলের এই দুরভিসন্ধির বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইবে । এক নাম্বার হইল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর অনুসারীরা, যাহাদের কিবলাহ হইল মক্কা শরীফ । তবে আমাদের মধ্যে অনেক লোক আছে যাহাদের কেবলাহ ওয়াশিংটনে । এমন কথা বলিবার জন্য দয়া করিয়া আমাকে ক্ষমা করবেন । হ্যাঁ, আমাদের মধ্যে এমন লোক আছে যাহাদের নিকট ইসলামের চাইতে আমেরিকান ভিসা বেশী গুরুত্বপূর্ণ । আমার ইউএস ভিসা আমার কাছে অধিক মূল্যবান, আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) হুকুম মানিয়া চলিবার চাইতে । কাজেই এমন কথা বলিবার জন্য আমাকে ক্ষমা করিবেন, দয়া করিয়া আমার ওপর বিরক্ত হইবেন না, কেননা আমারও কিছু দ্বায়িত্ব আছে । কাজেই আসন্ন মহাযুদ্ধে আক্রান্ত হইবে প্রধানত মুসলমানরা, কেননা তাহারাই ইসরাঈলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী রুখিয়া দাঁড়াইবে । অন্য আরেকদল লোকের বিরুদ্ধে এই মহাযুদ্ধ সংঘটিত হইবে যাহারা ইসরাঈলের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইয়াছে । সেই অন্য দলের লোকেরা কাহারা ? ইহার উত্তর পাওয়া যাইবে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদায়, এই যুগের প্রেক্ষাপটে ইহা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আয়াত । আল্লাহ তায়ালা বলেন, (এমন একটি সময় আসিবে যখন) তোমরা দেখিতে পাইবে মানুষের মধ্যে তোমাদের প্রতি শত্রুতায় সবচাইতে জঘন্য হইবে ইহুদীরা এবং (ইহুদীদের সাথে সাথে) আরেকটি দল হইবে মোশরেকরা (যাহাদের সকল কর্মকান্ডের ভিত্তি হইল শিরক / মূর্তিপূজা) । তারপর আল্লাহ বলিতেছেন, (সেই সময়) তোমাদের প্রতি ভালবাসা এবং মমতায় সর্বাধিক হইবে একদল লোক যাহারা বলে আমরা খ্রিষ্টান । একটি উদাহরণ দেই, আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, যখন জুমু’আর নামাযের জন্য আহবান করা হয়, তখন ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করিয়া আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও । কিন্তু তাহারা জুমআর নাম পাল্টাইয়া নতুন নাম দিয়াছে ফ্রাইডে । ফ্রাই কে ? কে কে স্প্যানিস ভাষা জানেন ? ফ্রাই হইল স্ক্যান্ডিন্যাভিয়ান দেবী যাকে তাহারা পূজা করে । ফ্রাইডে হইল দেবী ফ্রাইয়ের পূজার দিন । সুতরাং তোমরা দুই শ্রেণীর লোক দ্বারা প্রবলভাবে আক্রান্ত হইবে, ইহুদী এবং মোশরেক । কাজেই সেই সময় যখন ইহুদীরা হইবে তোমাদের প্রতি সর্বাধিক শত্রুভাবাপন্ন এবং এই শিরক ভিত্তিক সভ্যতা তোমাদের বিরুদ্ধে পৈশাচিক যুদ্ধ ঘোষণা করিবে । একই কথা বারবার পূণরাবৃত্তি করিবার জন্য আমি দুঃখিত। আল্লাহ বলেন, সেই সময় তোমাদের প্রতি ভালবাসা এবং মমতায় সর্বাধিক হইবে একদল লোক যাহারা বলে আমরা খ্রিষ্টান । আল্লাহ এখানেই থামিয়া যান নাই, তিনি আরো বলিতেছেন, ইহার কারণ তাহারা মঠবাসী / আশ্রয়বাসী সাধু দরবেশ এবং তাহারা অহংকারী নয় । আমি যদি একটি হোটেলে গিয়া কারি চিকেন নেই, তারপর জামার আস্তিন ঘুটাইয়া আল্লাহর দেওয়া কাটা চামচ অর্থাৎ হাত দিয়া খাওয়া শুরু করি, তবে এই লোকেরা বলিবে, এইভাবে খাওয়া সভ্য লোকের কাজ নয় । …হা..হা..হা… আমার উত্তর হইল, তোমার সভ্যতা ভদ্রতা লোহিত সাগরে নিক্ষেপ কর । তোমরা অহংকারী বলিয়াই সারা দুনিয়ার মানুষকে তোমাদের কার্বন কপি বানাইতে চাও । তোমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির আমার নিকট কানাকড়িও মূল্য নাই । তোমরা কিভাবে ভাবিতে পারো যে, একজন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের অধিবাসী হইয়াও আমাকে ভদ্রলোক হওয়ার জন্য, তোমাদের সাথে চলাফেরার যোগ্য হওয়ার জন্য সুটকোট জেকেট এবং টাই পড়িতে হইবে ? ইহা হইল পাগলাগারদ ! সুতরাং একদল লোক আছে যাহারা দাম্ভিক অহংকারী । তাহারা চায় অন্যদেরকে তাদের কার্বন কপিতে পরিণত করিতে । তাহারা চায় তামাম পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করিতে । তাহলে ইহারা কোন খ্রিষ্টান যাহারা মুসলমানদের প্রতি ভালবাসা এবং মমতায় অধিক নিকটবর্তী হইবে ? ইহারা হইল সেই খ্রীষ্টান যাহাদের মধ্যে আছে মঠবাসী / আশ্রমবাসী সাধু-সন্ন্যাসীর দল । তাহারা অহংকারী নয় । তাহারা সারা দুনিয়া শাসন করিতে চায় না । তাহারা অন্যদেরকে তাহাদের কার্বন কপি বানাতে চায় না । খ্রীষ্টান জগত প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত । এক ভাগ হইল সেটা যাহারা ২৫ শে ডিসেম্বর বড়দিন পালন করে আরেক ভাগ হইল যাহারা ৭ই জানুয়ারী বড়দিন পালন করে । এদের এক ভাগকে বলা হয় পাশ্চাত্য খ্রীষ্টবাদ (ক্যাথলিক) আর অন্য ভাগকে বলা হয় অর্থোডক্স খ্রীষ্টবাদ । রাশিয়া হইল অর্থোডক্স খ্রীষ্টানদের নেতা, সেখানে আছে এই সাধু-দরবেশদের মঠ ব্যবস্থা । পাশ্চাত্যের খ্রীষ্টবাদে একজন ছাড়া অন্য কাহারো দাঁড়ি রাখার অনুমতি নাই । আপনি পুলিশে চাকুরি করিলে দাঁড়ি রাখিতে পারিবেন না । আপনি হোটেলে চাকরি করিলে দাঁড়ি রাখিতে পারিবেন না। সেখানে একজন মাত্র দাঁড়িওয়ালা লোক বছরে একবার ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়া আসেন । কাজেই ইহা হইল শান্তাক্লজ খ্রীষ্টবাদ । কিন্তু অর্থোডক্স খ্রিষ্টান জগতে এসব শান্তাক্লজ কালচার নাই । আমি যখন রাশিয়াতে বেড়াতে যাই, দেখিলাম দাঁড়িওয়ালা লোক প্রচুর । আমাকে মষ্কো ষ্টেট ইউনির্ভাসিটিতে লেকচার দেওয়ার জন্য যিনি দাওয়াত দিয়াছিলেন, অধ্যাপক আলেকজান্ডার ডুগিন, তিনিও একজন দাঁড়িওয়ালা লোক, তাহারও দেখিলাম বড় বড় দাঁড়ি, আমার পাশেই বসিয়াছিলেন । কাজেই দুই ধরনের লোক ইসরাঈলের জন্য হুমকি হইয়া দাঁড়াইবে, তাহারা হইল মুসলমান এবং অর্থোডক্স খ্রিষ্টান । অর্থোডক্স খ্রীষ্টানদের কথা কি কোরআনে আছে ? হ্যাঁ, একটি বড় সুরাই আছে তাদের সম্পর্কে, সুরা রুম, সম্ভবত ৩১ নাম্বার সুরা । দেখুন সুরাটি কিভাবে শুরু হইয়াছে । “রুমানরা পরাজিত হইয়াছে” । সেই সময় যেহেতু ওয়াশিংটন ছিল না, ন্যাটো ছিল না, কাজেই আল্লাহ তায়ালা ইহাদেরকে ইশারা করিবার প্রশ্নই আসে না । দেখুন আল্লাহ তায়ালা ভবিষ্যতবাণী করিতেছেন, “শীঘ্রই তাহারা (রোমানরা) বিজয়ী হইবে যখন মুসলমানরা আনন্দ উদযাপন করিবে”। তাহলে এই রুম (রোমান) কাহারা ? এই রুম হইল অর্থোডক্স খ্রীষ্টানরা , বাইজানটাইন সাম্রাজ্য । কন্সট্যান্টিপুল ছিল তাহাদের রাজধানী । বর্তমানে রাশিয়া হইল রোমানদের নেতা । গ্রীসও রুমে । আর্মনিয়াও রুমে । বুলগেরিয়াও রুমের অন্তর্ভূক্ত । পারমানবিক মহাযুদ্ধ কেন আসিতেছে ইহার কারণ কি ? ইহার কারণ মুসলিম বিশ্বে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী শক্তি একমাত্র পাকিস্তান । কিন্তু পাকিস্তান কিছুটা ওজনে হালকা । কিন্তু অর্থোডক্স খ্রীষ্টানরাও রাশিয়ার কারণে একটি প্রভাবশালী পারমাণবিক শক্তি । সুতরাং আমেরিকার পরে ইজরাঈলের পক্ষে কিছুতে নতুন পরাশক্তি / সুপারপাওয়ার হওয়া সম্ভব নয় যতক্ষণ না পাকিস্তান এবং রাশিয়া তাহার নিকট আত্মসমর্পন করে । বর্তমানে যেভাবে পাকিস্তানী সরকার আত্মসমর্পন করিয়াছে আমেরিকার কাছে এবং সৌদী আরবের কাছে । কিন্তু পাকিস্তানের জনগণ কখনও ইসরাঈলের কাছে মাথা নত করিতে প্রস্তুত নয় । সৌদী আরব যখন ইয়েমেনে হামলা করিল, প্রায় দুই সপ্তাহ পূর্বে, তাহারা একটি জোট তৈরী করিল আবুধাবী, কাতার, মিশর ইত্যাদি দেশকে নিয়া । সৌদী আরব মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধনী দেশ আর ইয়েমেন হইল সবচেয়ে গরীব দেশ। সবচাইতে ধনী দেশ হামলা করিয়াছে সবচাইতে গরীব দেশটির ওপর । পাকিস্তান সরকার হইল সৌদী শাসকদের জুতাপালিশকারী, নওয়াজ শরীফ সরকারও সৌদীদের জুতাপালিশ বালক । এই লেকচার রেকর্ড হইতেছে তারপর ইউটিউবে যাইবে পাকিস্তানেও ছড়াইয়া পড়িবে । আমি আমার কঠোর ভাষার জন্য ক্ষমা চাইতে ইচ্ছুক নই, কেননা কাউকে না কাউকে তো সত্য কথা বলিতেই হইবে । তো পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীও এসব জুতাপালিশ বালকদের দ্বারা পরিচালিত হয় যাহারা মার্কিন ডলারের বিনিময়ে নিজেদের বিক্রি করিয়া দেয়, তাহাদের কিবলাহ হইল ওয়াশিংটনে । কাজেই পাকিস্তান যদি সৌদীদের দাবী মোতাবেক ইয়েমেন আক্রমণে যোগ দেয়, তবে ইরানের সাথে তাহার প্রতিক্রিয়া কি হবে ? পাকিস্তানকে এমনিতেই একদিকে শত্রুভাবাপন্ন ইন্ডিয়াকে সামলাইতে হইতেছে, তখন আরেকদিকে শত্রু হইয়া দাঁড়াইবে ইরান । সুতরাং পাকিস্তানের জুতাপালিশ সরকার সৌদী দাবীর বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পার্লামেন্টের উপর ছাড়িয়া দেয় । সৌদী শাসকরা অবশ্য ভীষণ ক্ষেপিয়া যায় । পার্লামেন্টে বিষয়টিতে বিতর্ক অনুষ্টিত হয় এবং নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে সৌদী দাবী প্রত্যাখ্যান করে । কাজেই পাকিস্তানী জনগণ সবসময় ইসরাঈলবিরোধী এবং পাকিস্তানী সরকার সবসময়ই ইসরাঈলের অনুগত। কিন্তু রাশিয়ার ব্যাপারটি অন্য রকম । রাশিয়ার ব্যাপারে তাহারা যাহা করিয়াছিল, ইহুদীরা সেখানে বলশেভিক (কমুনিষ্ট) বিপ্লব সংঘটিত করিয়াছিল অর্থোডক্স খ্রীষ্টবাদকে ধ্বংস করিবার জন্য । তাহারা নাস্তিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্টা করিয়াছিল অর্থোডক্স খ্রীষ্টানদেরকে ধ্বংস করিবার জন্য, অথচ ইহারা রাশিয়ান ইহুদী ছিল না । নাস্তিক কমিউনিষ্ট আমলে রাশিয়ায় হাজার হাজার পাদরী / পুরোহিতকে হত্যা করা হইয়াছিল, হাজার হাজার মঠ / আশ্রম বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছিল । তাহাদের পরিকল্পনা তাহারা করিয়াছিল কিন্তু সফলকাম হইতে পারে নাই । যখন ১৯৮৯ সালে সৌভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়, রাশিয়া পুণরায় তাহাদের অর্থোডক্স খ্রীষ্টবাদে ফিরিয়া যায় । অর্থোডক্স খ্রীষ্টবাদে তাহাদের প্রত্যাবর্তন পুরোপুরি সম্পন্ন হয় না, প্রক্রিয়া এখনও চলিতেছে । রাশিয়া অর্থোডক্স খ্রীস্টবাদে ফিরিয়া যাওয়ার কারণে যায়োনিস্টদের (ইহুদীবাদীদের) নিকট, ওয়াশিংটনের নিকট মাথানত করিতে অস্বীকার করে । আর এই কারণে তাহারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আয়োজন করিতেছে, যাহাতে রাশিয়া পারমাণবিক শক্তি হিসাবে টিকিয়া থাকিতে না পারে, পাকিস্তান পারমাণবিক শক্তি হিসাবে টিকিয়া থাকিতে না পারে । সম্প্রতি ইরান সফরের সময় আমি দুইটি স্বপ্ন দেখিয়াছি (সেপ্টেম্বর / ২০১৪), একটার পর আরেকটা, যাহাতে আমি দেখিয়াছি পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হইয়া গিয়াছে এবং আকাশের দিকে পারমানবিক ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করা হইয়াছে । একই ঘটনা ঘটিয়াছিল নাইন ইলাভেনের পূর্বে যখন আমি নিউ ইয়র্কের লঙ আইল্যান্ডে বসবাস করিতাম । আমি স্বপ্নে দেখিয়াছিলাম নাইন ইলেভেন সংঘঠিত হইয়াছে, ম্যানহাটনের উচুঁ বিল্ডিংয়ে আগুন দেওয়া হইয়াছে এবং সেখান থেকে একটার পর একটা বিল্ডিংয়ে আগুন ছড়াইতে ছড়াইতে সারা পৃথিবীতে আগুনের শিখা ছড়াইয়া পড়িয়াছে । লং আইল্যান্ডের দার আল কোরআন মসজিদের জু’মুআর খোতবায় আমি আমার স্বপ্নের বিষয়টি উল্লেখ করিয়াছিলাম । আমার এই স্বপ্ন দেখিবার দুই বছর পরে নাইন ইলাভেন সংঘঠিত হয় । এই স্বপ্নটি দেখিবার সাথে সাথেই আমার সেই নাইন ইলাভেনের স্বপ্নের কথা মনে পড়িল । মহানবী (সাঃ) বলিয়াছেন যে, আখেরী জমানায় ঈমানদারদের স্বপ্ন কদাচিৎ মিথ্যা প্রমাণিত হইবে । আমি আমার স্বপ্নের কথা সাধারণত প্রকাশ করি না কিন্তু এই স্বপ্নটি আপনাদের কল্যাণে আসিবে ধারনা করিয়া প্রকাশ করিলাম । কাজেই নাইন এলেভেনের স্বপ্নের ইশারা অনুযায়ী বলা যায় যে, আমাদের হাতে মাত্র অল্প সময় বাকী আছে, গত সেপ্টেম্বর হইতে হিসাব করিয়া দুই বছর, যখন পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ শুরু হইবে । কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কেন ? এখন আমরা পুণরায় রাশিয়ার প্রসঙ্গে আসি । রাশিয়া তাহাদের নিকট নতজানু হইতে নারাজ । রাশিয়া বলে, তোমরা যুদ্ধ চাইলে তোমাদের যুদ্ধই দিব । কিন্তু রাশিয়ার ব্যাপারে তাহাদের একটি মহাপরিকল্পনা আছে, যাহা একটু আগে আমি সভাপতির নিকট ব্যাখ্যা করিতেছিলাম । পবিত্র কোরআনের সুরা কাহফে আছে জুলকারনাইনের কথা । কারন্ মানে শিং আবার কারন্ মানে যুগ / সময় / কাল । কিন্তু কোরআনে কারন্ শব্দটি আল্লাহ যতবার ব্যবহার করিয়াছেন যুগ হিসাবেই ব্যবহার করিয়াছেন, কখনও শিং হিসাবে ব্যবহার করেন নাই । সুতরাং জুল কারন্ মানে দুই যুগ । যুলকারনাইনের ছিল ক্ষমতা, আল্লাহ তাহাকে শক্তি দিয়াছিলেন আর তাহার ছিল ঈমান । সে সূর্য যেদিকে অস্ত যায় সেদিকে ভ্রমণ করিতেছিল । সেখানে তিনি এমন একটি জলাধারের সম্মুখীন হইলেন যাহার পানি ছিল কালো অন্ধকার রঙের । জুলকারনাইনের সেখানে একদল লোকের সাথে সাক্ষাত হইল । আল্লাহ বলিলেন, হে জুলকারনাইন ! তুমি তাহাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করিতে চাও ? যুলকারনাইন বলিলেন, হে আল্লাহ ! তাহারা যদি অত্যাচারী হয় তবে আমি তাহাদেরকে কঠোর শাস্তি দিব আর (আমার শাস্তি শেষ হইলে পরকালে) আপনিও তাহাদেরকে শাস্তি দিবেন । আর তাহারা যদি ঈমানদার এবং সৎকর্মশীল হয়, তবে আমি তাহাদেরকে পুরষ্কৃত করিব । সুতরাং এই আয়াতের শিক্ষা হইল আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাকে ব্যবহার করিতে হইবে অত্যাচারীদের জালেমদের শায়েস্তা করিবার কাজে। তারপর তিনি অভিযানে বাহির হইলেন পূর্ব দিকে আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে এবং তৃতীয়বার অভিযানে বাহির হন দুই পর্বতের মধ্যবর্তী রাস্তা ইয়াজুজ-মাজুজের দেশে । এই কালো এবং অন্ধকার পানির জলাশয়টি কোরআনের সকল তাফসিরেই একবাক্যে কৃষ্ণসাগর বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে । আর আপনার যদি ভূগোল সম্পর্কে জ্ঞান থাকে তবে দেখিবেন ভূমধ্যসাগরের উপরের দিকেই আছে কৃষ্ণসাগর । কৃষ্ণসাগর ছাড়া রাশিয়ার কোন নৌবন্দর নাই । কারণ রাশিয়ার উত্তর দিকের পুরোটাই বরফ আচ্ছাদিত । কাজেই রাশিয়ার যদি নৌবাহিনী থাকে, তবে তাহার জন্য কৃষ্ণসাগর খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কৃষ্ণসাগর থেকে রাশিয়াকে বিতাড়িত করিতে পারিলে রাশিয়া আর ইসরাঈল এবং যায়োনিষ্টদের জন্য কোন হুমকি সৃষ্টি করিতে পারিবে না । কাজেই কৃষ্ণসাগরের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশী । মালহামার (তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের) পরে খুব সম্ভবত ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধাস্ত্র (মিসাইল/জঙ্গী বিমান) থাকিবে না, কেননা পারমাণবিক যুদ্ধ তো এমনই। সুতরাং মালহামার পরে যুদ্ধ হবে কেবল স্থল এবং নৌ পথে । কাজেই আমেরিকার পরে যখন ইসরাঈল নতুন সুপারপাওয়ার হইবে, তখন ইসরাঈলের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি আসিবে এক নাম্বারে পাকিস্তানের পক্ষ হইতে এবং দুই নাম্বারে রাশিয়ার পক্ষ হইতে, নৌবাহিনীর হামলা । সুতরাং ইসরাঈলের জন্য কৃষ্ণসাগরের সামরিক গুরুত্ব অপরিসীম । কৃষ্ণসাগরে প্রবেশের সবচাইতে সুবিধাজনক এলাকা কোনটি কেউ বলতে পারেন ? ক্রিমিয়া ? হ্যাঁ, ক্রিমিয়া । আপনার নিশ্চয় ভূগোল নিয়ে পড়াশুনা আছে । কাজেই বলা যায় ক্রিমিয়া যাহার দখলে কৃষ্ণসাগর তাহার দখলে । আর ক্রিমিয়া ছিল রাশিয়ার ভূখন্ড । তাহাদের পরিকল্পনা ছিল বলা যায় মাস্টারপ্লান ছিল সোভিয়েত কমুনিষ্ট রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করা । তারপর ১৯৫৪ সালে অর্থাৎ ইজরাঈলের প্রতিষ্টার ছয় বছর পরে নিকিতা ক্রুশ্চেভ রাশিয়ানদের মতামত ছাড়াই রাশিয়ান ভূখন্ড ক্রিমিয়াকে স্থানান্তর করিয়া ইউক্রেনের অন্তর্ভূক্ত করিয়া দেয় । কিন্তু তখনও কোন সমস্যা ছিল না যেহেতু রাশিয়া এবং ইউক্রেন দুটোই সৌভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে ছিল । তারপর সমস্যা দেখা দিল যখন যায়োনিষ্টরা রঙিন বিপ্লবের মাধ্যমে সৌভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটায় । তাহারা সৌভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটায় কেন ? যাহাতে ইউক্রেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভূত হয় । ফলে রাশিয়া হবে একটি ফেডারেশান আর ক্রিমিয়া হবে ইউক্রেনের অংশ । এই ভূরাজনৈতিক পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশ হইল ইউক্রেনে একটি পাশ্চাত্যপন্থী সরকার প্রতিষ্টা করা যাহাতে সে যায়োনিষ্ট ন্যাটোর সদস্য হইয়া যায় । আর ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হইতে পারিলে রাশিয়াকে বলিবে ক্রিমিয়া থেকে দূর হও । ফলে রাশিয়ার আর কোন নৌবন্দর থাকিবে না এবং ইসরাঈলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হইবে । কাজেই বছর খানেক আগে ডিসেম্বরে তাহারা কি করিয়াছে ? রাস্তায় কিছূ মিছিল মিটিংয়ের আয়োজন করিয়া ইউক্রেনের রাশিয়াপন্থী সরকারের পতন ঘটাইয়া একটি পাশ্চাত্যপন্থী সরকার প্রতিষ্টা করিয়াছে । এই ঘটনার সাথে সাথে রাশিয়া এমন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়াছে যাহাতে পাশ্চাত্য যারপর নাই বিস্মিত হইয়াছে । রাশিয়া তখন ক্রিমিয়ার পার্লামেন্টের স্মরণাপন্ন হয় এবং ক্রিমিয়ার পার্লামেন্ট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ট ভোটে একটি সিদ্ধান্ত পাস করে যে, ক্রিমিয়া রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত হইতে চায় । অন্যদিকে রাশিয়ার পার্লামেন্ট সাথে সাথেই ক্রিমিয়ার পার্লামেন্টের আবেদন গ্রহন করিয়া আরেকটি রেজুলুশান পাস করিবার মাধ্যমে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত করিয়া নেয় । মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই পুরো ঘটনাটি ঘটিয়া গেলো । সুতরাং বলা যায় ইহা ছিল যায়োনিষ্ট আন্দোলনের গালে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চপেটাঘাত । কারণ এখন রাশিয়া আবার ক্রিমিয়াকে ফিরিয়া পাইয়াছে এবং রাশিয়া বর্তমানে একটি পারমাণবিক শক্তি । একশ বছর আগে তো এমনটা ছিল না । রাশিয়া বর্তমানে কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী সকল দেশের নিয়ন্ত্রণ শক্তি এবং তুরষ্কসহ সকল দেশকেই রাশিয়া আক্রমণের পূর্বে দুইবার ভাবিতে হইবে । কাজেই অত্র এলাকার ভূরাজনেতিক অবস্থা নাটকীয়ভাবে পাল্টাইয়া গিয়াছে । কাজেই তাহারা রাশিয়া আক্রমণ করিতে যত বিলম্ব করিবে রাশিয়া ততই আরো শক্তিশালী হইয়া উঠিবে । সুতরাং এক হইতে দুই বছরের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ / মালহামা শুরুর বিষয়টি যুক্তিসঙ্গত । কারণ তাহারা যদি বেশী দেরি করে তবে রাশিয়া আরো অধিক শক্তিশালী হইয়া উঠিবে । রাশিয়া কি পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ থেকে পেছনে ফিরিয়া যাইবে ? নাহ, রাশিয়া পিছাইতে প্রস্তুত নয় । কাজেই পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধ আসিতেছে । জালিমদের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ানো, ইহাই রাশিয়ার ভাগ্যলিপি । জালেমদের দমনে শক্তি প্রয়োগ করা । জুলকারনাইন ইহা প্রথমবার করিয়াছিলেন । কেননা জুলকারনাইন অর্থ দুই যুগ । পৃথিবীর একই অঞ্চলে একবার যেই ঘটনা ঘটিয়াছিল, সেখানে আবারো তাহা ঘটিতে যাইতেছে । ইহা কোরআনের সুরা কাহফে আছে । সুরা কাহফে এমনটাই ইশারা করা হইয়াছে । কাজেই আসন্ন পারমাণবিক বিশ্বযুদ্ধে রাশিয়া তাহার শক্তি ব্যবহার করিবে জালেমদের শায়েস্তা করিতে । আগামীকাল ইনশায়াল্লাহ আমি এই বিষয়টিকে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করিব । পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তাহারা রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের উপর হামলা শুরু করিয়াছে । তাহারা রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের উপর হামলা শুরু করিয়াছে । রাশিয়ান রুবল তাহার মূল্যমান হারাইতেছে মূল্য হারাইতেছে মূল্য হারাইতেছে বিপুল মুদ্রাস্ফাতির শিকার হইতেছে । ইহা প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক নয় বরং সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে । আমি যখন জুলাইতে মষ্কো সফর করি তখন এক ডলার সমান ছিল ৩৩ রুবল । তারপর রাশিয়া যখন ক্রিমিয়া দখল করিল, তখন বলিল, আমি ক্রিমিয়া ফেরত দিব না, তোমরা যাহা ইচ্ছা করিতে পারো । তখন হইতে রহস্যজনকভাবে হঠাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমিতে লাগিল । সুতরাং তাহারা অর্থনৈতিক অস্ত্র দিয়ে মুদ্রানীতির অস্ত্র দিয়া রাশিয়াকে আক্রমণ করিতেছে । আগামীকালের লেকচারে ইনশাআল্লাহ আমরা আলোচনা করিব হাদীসে বর্ণিত “সোনার পাহাড়” সমন্ধে । মহান আল্লাহর নিকট আমরা প্রার্থনা করি আসন্ন পারমাণবিক মহাযুদ্ধ মোকাবেলার জ্ঞান তিনি আমাদেরকে দান করেন । কি করিতে হইবে, কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হইবে এবং মহাযুদ্ধ পরবর্তীতে পৃথিবীর অবস্থা কেমন হইবে ? আবার আমাদেরকে সুরা কাহফের স্মরণাপন্ন হইতে হইবে । আমাদেরকে শহর ছাড়িয়া পালাইতে হইবে । কেননা শহরগুলি ধ্বংস হইয়া যাইবে । যাহারা মৃত্যুবরণ করিবে তাহারা ভাগ্যবান আর যাহারা বাঁচিয়া থাকিবেন তাহারা দুর্ভাগা, কেন ? কেননা একটি শহরের দুই কোটি অধিবাসীর মধ্যে যাহারা বাঁচিয়া থাকিবেন তাহাদের খাবার দরকার কিন্তু খাবার নাই, তাহাদের পানি দরকার কিন্তু পানি নাই । কেননা এসব শহরের খাবার-পানি বাইরে থেকে সরবরাহ করা হয় আর যুদ্ধের ফলে খাবার-পানি সরবরাহ লাইন ভাঙিয়া পড়িবে । কাজেই খাবার-পানি সংগ্রহের আপ্রাণ চেষ্টা মানুষকে উশৃঙ্খল-উন্মাদ করিয়া ফেলিবে । আপনি নিশ্চয় এমন পরিস্থিতিতে বসবাস করিতে চাহিবেন না । সুতরাং নিজের নিরাপত্তার জন্য দূরবর্তী গ্রামাঞ্চলে চলিয়া যান । পর্যাপ্ত খাবার সংগ্রহে রাখেন, যথেষ্ট পানি সংগ্রহে রাখেন এবং সারাক্ষন আল্লাহর নিকট দোয়া করিতে থাকেন । মূল - আল্লামা ইমরান নজর হোসেন অনুবাদ – ডাঃ বশীর মাহমুদ ইলিয়াস Explaining & Preparing For Nuclear War লেকচারের অনুবাদ |
|